কেন ইশরাককে বেছে নিলো বিএনপি

October 14, 20200

দলে একাধিক সিনিয়র ও যোগ্য প্রার্থী থাকলেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে তরুণ ইশরাক হোসেনকে বেছে নিয়েছে বিএনপি। মনোনয়নপ্রাপ্তির পেছনে অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার পুত্র-পরিচয়টিই একমাত্র দৃশ্যমান কারণ হলেও দলের দায়িত্বশীলরা বলছেন, সুনির্দিষ্ট তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে তরুণ ইশরাকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে দলীয় নির্বাচনি প্রতীক।

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বিএনপি নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকতে চায় এবং এ চিন্তা থেকেই প্রকৌশলী ইশরাককে বেছে নেওয়া হয়েছে। আসন্ন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভোট কেমন হবে, সে বিষয়ে একটি সম্ভাব্য শঙ্কা ধরে রাখলেও এ নির্বাচনি প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়েই তাকে পরিচিত করে তোলা সহজ হবে বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।

দ্বিতীয় কারণ হিসেবে তিনি দাবি করেন, দীর্ঘমেয়াদে নেতা হিসেবে গড়ে তুলতে পিতা সাদেক হোসেন খোকার পথ ধরে তার ছেলেকেও দলীয় রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় বিএনপি হাইকমান্ড। বয়সে তরুণ হওয়ায় দলে সময় দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব, পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের কাছেও সহজে জায়গা পাবেন ইশরাক হোসেন। তৃতীয়ত, যেকোনও নির্বাচনের সঙ্গে প্রার্থীর অর্থনৈতিক ভিত্তি অনেক গুরুত্বপূর্ণ, সে চিন্তা থেকেও ইশরাককে যুক্ত করা হয়েছে নির্বাচনি প্রক্রিয়ায়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলছেন, ‘প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়া হবে এটা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ই অনেকটা নির্ধারণ হয়। দলের শীর্ষনেতৃত্ব ওই সময় ঢাকা-৬ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীকে সমর্থন দেওয়ায় বিএনপির প্রার্থী হিসেবে বাদ পড়েন ইশরাক। আর ঢাকা মহানগরের রাজনীতিতে প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকা বলয়টিকে সক্রিয় রাখতে তার ছেলেকেই বেছে নিয়েছেন শীর্ষনেতৃত্ব।’

তবে দলের মধ্যম সারির কয়েকজন নেতা শীর্ষনেতৃত্বের এ সিদ্ধান্তের বিপক্ষে। গত ৩০ ডিসেম্বর দলের গুরুত্বপূর্ণ কাজের সঙ্গে যুক্ত একজন নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইশরাক হোসেন ঢাকার মেয়র প্রার্থী, এটা প্রভাব বিস্তার করার মতো কোনও সিদ্ধান্ত নয়। বিশেষ করে বয়সে এত তরুণকে কেবল পিতার আনুকূল্যে বিবেচিত করার মানেই হলো দলীয়ভাবে পারিবারিক-প্রভাব ও প্রথা আরও চেপে বসা। দলের হাইকমান্ড থেকে তৃণমূলেও পরিবারের মাধ্যমে এমন রিক্রুটমেন্ট বজায় থাকলে সাধারণ নেতাকর্মীরা নিরুৎসাহিত হবেন।’

ইশরাক হোসেনকে প্রার্থী করার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজেও সাংবাদিকদের কাছে ব্যাখ্যা করেছেন। গত ২৮ ডিসেম্বর মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ‘দক্ষিণে আমাদের প্রার্থী একজন, তিনি হচ্ছেন ইশরাক হোসেন, প্রকৌশলী। তার একটা ব্যক্তিগত পরিচয় আছে, আমাদের ঢাকার সাবেক মেয়র প্রয়াত সাদেক খোকা সাহেবের বড় ছেলে তিনি। যদিও তিনি একেবারে নতুন। তবে নতুনদের মাঝে তার একটা বড় আকর্ষণ থাকবে, প্রভাব থাকবে। বিশেষ করে তিনি উচ্চশিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ার, মাস্টার্স করেছেন। তার চিন্তাশক্তি, মেধা, বাচনভঙ্গি সবকিছুই মোটামুটিভাবে মনে হয় মানুষকে আকৃষ্ট করবে এবং করেছেও বোধ হয়। সেজন্য আমরা মনে করেছি যে ইশরাক হোসেন আমাদের একজন ভালো প্রার্থী। তাকে সেজন্য মনোনয়ন দিয়েছি।’

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বা দায়িত্বশীলদের কাছে নানা ব্যাখ্যা থাকলেও বিএনপির ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও দায়িত্বশীলরা বলছেন, মির্জা আব্বাস ঢাকা দক্ষিণ সিটি থেকে ভোট করতে অনীহা প্রকাশ করার কারণেই সাবেক মেয়র খোকার ছেলে ইশরাককে মনোনীত করা হয়েছে।

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, মেয়রপ্রার্থী হিসেবে ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটিতে ভোট করেছিলেন মির্জা আব্বাস। যদিও বিভক্ত ঢাকার মেয়র হতে খুব একটা আগ্রহ ছিল না ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত অবিভক্ত নগরীর এই মেয়রের। বিশেষ করে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ব্যবসায়ী নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টুর ঢাকার মেয়র হতে চাওয়ার আগ্রহের বিষয়টি বিএনপিতে আলোচনায় ছিল। যদিও ঢাকা মহানগরী দুই করপোরেশনে বিভক্ত হলে মিন্টু নির্বাচন করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন এবং ২০১৫ সালে তার ছেলে তাবিথ আউয়ালকে বেছে নেয় বিএনপির শীর্ষনেতৃত্ব। আবদুল আউয়াল মিন্টুর বদলে তার ছেলে নির্বাচন করায় মির্জা আব্বাসও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রচারণা থেকে বিরত থাকেন। নিজে প্রার্থী হলেও স্ত্রী আফরোজা আব্বাসকে পুরোদমে প্রচারণার মাঠে সক্রিয় করেন তিনি। তদানীন্তন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গ্রেফতার হওয়ার আশঙ্কাও আরেকটি কারণ ছিল। এই ধারাবাহিকতায় এ বছর ডিএসসিসি থেকে প্রার্থী হতে আব্বাস আগ্রহ দেখাননি এবং দলের শীর্ষনেতৃত্ব বিনা বাধায় ইশরাক হোসেনকে মনোনীত করে।

তবে গত মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার সময় অভিভাবকের মতো মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস ছিলেন ইশরাকের সঙ্গেই। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় কানে-কানে দুবার পরামর্শও দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।

ইশরাক হোসেন ঢাকার স্কলাস্টিকা স্কুল থেকে ‘এ’ ও ‘ও’ লেভেল পাস করার পর যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব হার্টফোর্ডশায়ারে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছেন বলে জানান বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান।

বিএনপির ঢাকা মহানগরের সাবেক কাউন্সিলর, মহানগর (দক্ষিণ) কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রাসেল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দলের হাইকমান্ড যোগ্য মনে করেই প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে মনোনয়ন দিয়েছে। এছাড়া আমাদের দলের প্রয়াত নেতা সাদেক হোসেন খোকার সন্তান তিনি। পিতার মতো তিনিও মেয়র নির্বাচিত হবেন, আমরা প্রত্যাশা করি।’

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার জানান, ‘দলের ভবিষ্যতের চিন্তা করেই তরুণ বয়সে মেয়র প্রার্থী করা হয়েছে ইশরাক হোসেনকে।’

#banglatribune

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *